ফারহান-উর-রহমান সময়, তজুমদ্দিন ॥ ভোলার তজুমদ্দিনে একমাত্র সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়ছে ভোগান্তিতে। জনবলের এমন সংকটের কারণে নষ্ট হচ্ছে এক্সরে মেশিন, ল্যাবসহ টেকনিক্যাল গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র।
জানা যায়, উপজেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা হাসপাতালটি হলেও সেখানে রয়েছে চিকিৎসকের ৬টি পদ শূণ্য। একজন মেডিকেল অফিসার ইউনানী থাকলেও দীর্ঘদিন তিনি প্রেষণে রয়েছে বোরহানউদ্দিনে। পদগুলি শূণ্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। বাধ্য হয়েই রোগীদের যেতে হচ্ছে ভোলা সদর, বরিশাল অথবা রাজধানী ঢাকাতে।
এছাড়া হাসপাতালটিতে যে সকল পদ শূণ্য রয়েছে, ইউনিয়ন সেন্টারে সহকারী সার্জন ৫টিতে ১টি শূণ্য, নাসিং সুপারভাইজার ২টিতে ২টি শূণ্য, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ১৩ জন থাকলেও ১জন রয়েছে ভোলা প্রেষনে, হাসপাতালে স্যাকমো ৭টিতে ৬টি শূণ্য, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাবঃ) ২টিতে একজন থাকলেও তিনি রয়েছেন প্রেষণে ভোলায়, মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের ৪টি পদে ২জন থাকলেও তাদেও একজন প্রেষণে ভোলা সদরে অন্যজন ১০ বছর যাবৎ রয়েছেন ঢাকায় প্রেসনে আর ২টি রয়েছে শূণ্য। ফার্মাসিষ্ট ২টিই শূণ্য, প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষকের পদটি শূণ্য, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরের ৩টি পদেই শূণ্য, ষ্টোর কিপার ১টিতে একটি শূণ্য, পরিসংখ্যানবিদ ১জন থাকলেও তিনি প্রেষনে ভোলায় রয়েছেন। সহকারী সেবক ১টিকে একটি শূণ্য, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ২টি পদ শূণ্য, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৬টিতে ২টি শূণ্য একজন ভোলায় প্রেষনে, স্বাস্থ্য সহকারী ৩২টিতে ৬টি শূণ্য, পিএইচসিপি ১৯টিতে ৪টি শূণ্য, অফিস সহায়ক ৪টিতে দুইটি, ওয়ার্ডবয় ৩টিতে দুইটি, কুক/মশালচী ২টিতে দুইটি, মালী ১টিতে একটি ও পচ্ছিন্নতা কর্মি ৫টিতে ৩টি শূণ্য। অনুসন্ধানে দেখা যায়, একটি পদে একজন কর্মরত থাকলেও আবার সেই কর্মরত ব্যক্তি নিজের পছন্দমত জায়গায় প্রেষন নিয়ে বসে আছেন। তারা ৬মাস থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত প্রেষনে রয়েছে। যার কারণে তার নিজ কর্মস্থল তজুমদ্দিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জনবল সংকটে নষ্ট ও অকেজো হচ্ছে এক্সরে মেশিনসহ মূল্যাবান মেশিনপত্র। চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা স্বপন দেবনাথ বলেন, হাসপাতালটিতে ডাক্তার সংকট না হলে আমাদেরকে দীর্ঘ সময় ব্যবস্থাপত্রের জন্য লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হতো না। দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। তজুমদ্দিন হাসপাতালের আরএমও ডা. মোঃ হাসান শরীফ বলেন, জনবল সংকটের কারণে রোগীর বিভিন্ন ধরনের টেষ্ট বাহিরে করতে হয়। আর তখনি রোগীদের সাথে আমাদের সমস্যার সৃষ্টি হয় জনবল ঠিক থাকলে হাসপাতালে সরকারী খরচে রোগীরা কম খরচে টেষ্ট করাতে পারতো। তিনি আরো বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় শিশু ও অর্থপেডিকসের রোগীদের আমরা ভোলায় রেফার করতে হয়। এখানে ডাক্তার থাকলে মানুষ ভোলায় যেতে হতো না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেল কবির বলেন, হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে কোন বিশেষজ্ঞ চিৎিসকে পদায়ন করা হয়নি। ডাক্তার, জনবল সংকট ও প্রেষনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে আশা করা যায় দ্রুত সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন, প্রেষনের বিষয়ে সুনিদিষ্ট নীতিমালা থাকার দরকার যে সে কতদিন প্রেষন ভোগ করতে পারবে।
Leave a Reply